গাড়ি স্টার্ট করতে গেলে ইঞ্জিনের ফ্লাইহুইল টিকে ঘুরাতে হবে। এত বড় এই ফ্লাইহুইল থেকে ঘোরানোর জন্যই ব্যবহার করা হয় স্টার্টিং মোটর (Starting Motor)। তাই আজ জানবো কিভাবে এই স্টার্টিং সিস্টেম টি পরিচালিত হয়।
গাড়িকে যখন স্টার্ট করা হয় সেই স্টার্ট করানোর জন্য ব্যবহার করা হয় স্টার্টিং সিস্টেম (Starting System)।অর্থাৎ ইঞ্জিন কে ঘোরানোর জন্য একটি মোটর ব্যবহার করা হয় সেই মোটর কে বলা হয় স্টার্টিং মোটর। সেই মোটর এর সাথে একটি পিনিয়ন থাকে যা ফ্লাইহুইলের সাথে কানেক্ট করা থাকে। যেহেতু ফ্লাইহুইল এর গিয়ার টিথ বেশি এবং মোটর এর কম সেই অনুপাতে গিয়ার রেশিও ৭:১ থেকে ১০:১ থাকে। এই গিয়ার রেশিও এর জন্য যে টর্ক থাকে তা অনেক বাড়িয়ে ইঞ্জিনে দেয়া হয়।
সুতরাং যখন গাড়ি স্টার্ট করা হয় তখন এই মোটর ফ্লাইহুইল (Flywheel) ঘুরিয়ে দেয় এবং ইঞ্জিন স্টার্ট হয়ে যায়। ইঞ্জিন স্টার্ট হবার পর ফ্লাইহুইল ২০০০-৩০০০ আরপিএম ( RPM ) এ ঘুরতে থাকে কিন্তু যে পিনিয়ন থাকে তা ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ আরপিএম এ ঘুরতে পারে। এত স্পিড থাকার কারণে মোটর যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এইজন্য মোটর এর ভেতরে একটি ডিভাইস লাগানো থাকে। যাকে ওভার রানিং ক্লাচ বলে। এই ডিভাইস টি ক্রাংকশ্যাফট (Crankshaft) থেকে আগত টর্ক কে আসতে দেয় না। ফলে কোন ক্ষতি হয় না।
স্টার্টিং মোটর এ যে পনিয়ন লাগানো থাকে সেটি একটি ডিসি মোটর (DC Motor) এর সাথে কানেক্ট থাকে। এই ডিসি মোটর এর কথা যদি বলা হয়,তাহলে এভাবে বলা যেতে পারে ,একটি গোল ফ্রেমের উপর চারটি পোল লাগানো থাকে এবং এই চারটি পোলের মাঝে একটি শ্যাফট থাকে যার উপরে একটি কন্ডাক্টর কয়েল এবং এই কয়েল এর উপরে থাকবে কমিউটেটর। তখন এই কমিউটেটর ব্রাশ এর সাথে কানেক্ট হবে ।
এই মোটর কে হাই কারেন্টে সহজে কাজ করানোর জন্য ৪ টি পোল কে ব্রাশ এর সাথে সিরিজে কানেক্ট করিয়ে ওয়াইন্ডিং করানো হয়। সিরিজে কানেক্ট হওয়ার কারণে এই মোটর কে ডিসি সিরিজ মোটর বলা হয়।
এখন এই ওয়াইন্ডিং এর ভেতর দিয়ে যখন কারেন্ট পাস হবে তখন এই চারটি পোল ইলেক্ট্রো ম্যাগনেট হয়ে যাবে এবং ম্যাগনেটিক ফিল্ড জেনারেট করবে।এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড কন্ডাক্টর এর উপর একটি টর্ক জেনারেট করবে। হাই কারেন্ট হবার ফলে হাই টর্ক পাওয়া যাবে।
এখন বলা যাক এই সিস্টেমটি কিভাবে সাজানো হয়েছে:
ব্যাটারি এর নেগেটিভ প্রান্তকে আর্থিং করা হয় এবং পজিটিভ লাইন সরাসরি ইগনিশন সুইচে যায়। ইগনিশন সুইচ থেকে তা নিউট্রাল সুইচ এ যায়। এখন নিউট্রাল সুইচ থেকে এটা কানেক্ট করা হয় স্টার্টার মোটর ওয়াইন্ডিং এর ভেতরে যে সলিনয়েড আছে তার সাথে ওয়াইন্ডিং এর আরেকটি তার আর্থিং করে দেওয়া হয়। যেন তার সাথে নিজস্ব সার্কিট কমপ্লিট করতে পারে।
এখন এই সলিনয়েডের সাথে দুইটি হাইটেনশন কন্টাক্ট থাকে যার সাথে কানেক্ট হবে হাইটেনশন ক্যাবল। প্রথম টি কানেক্ট হবে ব্যাটারি এর সাথে এবং দ্বিতীয়টি যাবে সরাসরি ফিল্ড ওয়াইন্ডিং এর ভেতরে। এখন এই ফিল্ড ওয়াইন্ডিং এর সাথে ব্রাশ সিরিজে কানেক্ট হবে এবং ব্রাশ এর দ্বিতীয় তার টি আর্থিং করা হয় যাতে করে এটিও ব্যাটারি এর সাথে সার্কিট কমপ্লিট করতে পারে।
এখন স্টার্টার মোটর এর সেন্টারে বা মাঝে যে ষ্যাফট কানেক্ট হয় তার উপরে একটি আর্মেচার মাউন্ট করা থাকে। আর এই আর্মেচারের ভেতরে কন্ডাক্টর গুলো থাকে। এই কয়েল গুলোর সাথেই কানেক্ট হয় কমিউটেটর। যা ব্রাশ এর সাথে কানেক্ট থাকবে। এর পরে আসবে সেই পিনিয়ণ যার সাথে ওভার রানিং ক্লাচ লাগানো থাকে । আর এই পিনিয়ন অপারেট করার জন্য একটি লিভার দেয়া থাকে যা সলিনয়েড এর সাথে কানেক্ট থাকে।
এই পুরো অ্যাসেম্বলি টি ফ্লাইহুইলের পাশেই থাকে। কেননা যখন স্টার্ট করা হবে এটি যেন ফ্লাইহুইলের সাথে কানেক্ট হতে পারে।
দেখা যাক কিভাবে এটি কাজ করে:
ব্যাটারি এর নেগেটিভ টার্মিনাল সিস্টেমের সার্কিট কমপ্লিট করতে কাজে আসবে। যখন ইগনিশন সুইচ এ চাপ দেওয়া হবে তখন ব্যাটারি থেকে লো কারেন্ট যাবে নিউট্রাল সুইচ এ। নিউট্রাল সুইট চেক করবে গাড়ি নিউট্রাল আছে কিনা। গাড়ি যদি নিউট্রাল এ থাকে তাহলে এই সুইচ ব্যাটারি থেকে আসা কারেন্ট কে স্টার্টার মোটর অ্যাসেম্বলি এর ভেতরে যে সলিনয়েড ওয়াইন্ডিং আছে সেখানে নিয়ে যাবে।
এই ওয়াইন্ডিং ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করবে এবং এর কারণে সলিনয়েড হাইটেনশন ক্যাবলের সাথে কানেক্ট হয়ে যাবে এবং সাথে সাথে লিভারের সাহায্যে মোটর এর পিনিয়ন টি ফ্লাইহুইল এর সাথে কানেক্ট হয়ে যাবে।
এখন সলিনয়েডের কারণে হাইটেনশন কয়েল বন্ধ হবার জন্য ব্যাটারি থেকে হাই কারেন্ট মোটরের ফিল্ড ওয়াইন্ডিং যায় । ফিল্ড ওয়াইন্ডিং একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড জেনারেট করে এবং ওখান থেকে কারেন্ট যাবে ব্রাশ এ। ব্রাশ থেকে তা কমিউটেটর এ যাবে। এখন মোটর এর আর্মেচার ঘুরতে থাকবে ফলে ওভার রানিং ফ্লাইহুইল টর্ক পাস করবে এবং ফ্লাইহুইল ঘুরতে শুরু করবে। আর তখনই গাড়ি স্টার্ট হবে।
এখন ইগনিশন সুইচ বন্ধ হওয়া মাত্রই সলিনয়েড আগের জায়গায় চলে আসবে এর কারনে মোটরের পিনিয়ন ফ্লাইহুইল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং হাই ভোল্টেজ কারেন্ট সার্কিট ব্রেক হয়ে যাবে। এই কারণে মোটর ঘোরা বন্ধ হয়ে যাবে এবং ফ্লাইহুইলের টর্ক মোটরে আর যাবে না।
অর্থাৎ দেখা যায় ইগনিশন সিস্টেম সলিনয়েড কে কন্ট্রোল করে আর এই সলিনয়েড স্টার্টিং সিস্টেম কে কন্ট্রোল করে।