বর্তমান বিশ্বে ইলেকট্রিক কার (Electric Car) এর জয়জয় কার চলছে। সম্প্রতি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা (Tesla) তাদের ইলেকট্রিক কার এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসা টয়োটা কে বিট করে ১ নম্বরে উঠে এসেছে। আর এই ইলেকট্রিক কার এর বেশ কয়েকটি টাইপ এর মধ্যে হাইব্রিড একটি। তাই আমাদের আজকের আলোচনার টপিক (Hybrid Car) হাইব্রিড কার।
হাইব্রিড গাড়ি কি।
হাইব্রিড গাড়ি (Hybrid Vehicle) বলতে বোঝায় এমন গাড়ি যা দুই ধরনের পাওয়ার দিয়ে চলতে সক্ষম। অর্থাৎ এই গাড়িতে ইঞ্জিন থাকে এবং সাথে একটি ইলেকট্রিক মোটর থাকে। গাড়ি ইঞ্জিন এবং মোটর এর কম্বিনেশনেও চলতে পারে আবার আলাদা আলাদা ভাবেও চলতে পারে।
এই হাইব্রিড গাড়ি ৬ ধরনের হয়।
- সিরিজ হাইব্রিড।
- প্যারালাল হাইব্রিড।
- সিরিজ- প্যারালাল হাইব্রিড।
- প্লাগ ইন হাইব্রিড।
- মাইল্ড হাইব্রিড।
- মাইক্রো হাইব্রিড।
১। সিরিজ হাইব্রিড: সিরিজ হাইব্রিড এ ইঞ্জিন এর সাথে একটি জেনারেটর লাগানো থাকে এবং এই জেনারেটর এর সাথে একটি ইনভার্টার বা কন্ট্রোলার সংযুক্ত করা হয়। আর এই ইনভার্টার এর এক প্রান্তের সাথে একটি হাই ভোল্টেজ ব্যাটারি এর সংযোগ থাকে এবং আরেক প্রান্তের সাথে ইলেকট্রিক মোটর এর সংযোগ থাকে। আর এই ইলেকট্রিক মোটর এর সাথেই রেয়ার এক্সেল এর সংযোগ থাকে। যার মাধ্যমে গাড়ির চাকাতে শক্তি সরবরাহ হয়।
এখন গাড়ি যখন ফুল ইলেকট্রিক মুড ( Electric Mood) এ থাকে তখন ব্যাটারি থেকে শক্তি মোটর এর সাহায্যে চাকাতে যায়। যার ফলে গাড়ি চলতে শুরু করে। যখন এই ব্যাটারি এর পাওয়ার কমে যাবে তখন তখন ইঞ্জিন অটোমেটিকালি স্টার্ট হবে এরপর জেনারেটর থেকে ইনভার্টারে এবং মোটরে পাওয়ার যাবে। যার ফলে একই সাথে মোটরও ঘুরবে এবং ব্যাটারিও চার্জ হবে। আর মোটর ঘুরলে গাড়িও চলতে শুরু করবে।
২। প্যারালাল হাইব্রিড: এই প্যারালাল হাইব্রিড গাড়িতে ইঞ্জিন এর সাথে একটি ইলেকট্রিক্যালি কন্ট্রোলড ট্রান্সমিশন ব্যবহার করা হয়। ট্রান্সমিশনটি ইলেকট্রিক মোটর এর সাথে কানেক্টেড থাকে। এই মোটরটি জেনারেটর এর মত কাজ করে। মোটর এর সাথে লাগানো থাকে একটি ইনভার্টার এবং এই ইনভার্টার এর সাথে হাই ভোল্টেজ ব্যাটারি এর সংযোগ থাকে। এখানে রেয়ার এক্সেল এর সাথে ট্রান্সমিশন এর সংযোগ থাকে। তাই এখান থেকে শক্তি চাকাতে সরবরাহ হয়।
ইলেকট্রিক মুড এ ব্যাটারি থেকে ইনভার্টার এর সাহায্যে মোটরটি ট্রান্সমিশনকে ঘুরায়। যার ফলে ট্রান্সমিশন থেকে শক্তি রেয়ার এক্সেল থেকে চাকাতে যায় এবং গাড়ি চলে। আর যখন গাড়ি ইঞ্জিন মুড (Engine Mood) এ চলে তখন ইঞ্জিন থেকে ট্রান্সমিশনে শক্তি সরবরাহ করা হয় এবং সেটা রেয়ার এক্সেল এ যায়। আর ট্রান্সমিশন এর সাথে যে মোটর লাগানো থাকে এটি জেনারেটর এর মত কাজ করায় গাড়ি চলার সময় ব্যাটারিও চার্জ হয়।
৩। সিরিজ- প্যারালাল হাইব্রিড: এটি সিরিজ এবং প্যারালাল এর কম্বাইন্ড সেকশন। যেখানে ইঞ্জিন এর সাথে একটি পাওয়ার স্প্লিটার (Spliter) থাকে। আর এই পাওয়ার স্প্লিটার এর সাথে জেনারেটর এবং মোটর দুইটিই কানেক্টেড থাকে। এই দুইটি আলাদা জেনারেটর এবং মোটর একটি ইনভার্টার এর সাথে সংযোগ করা থাকে। ইনভার্টার এর কানেকশন থাকে হাই ভোল্টেজ ব্যাটারি এর সাথে। এখানে রেয়ার এক্সিল পাওয়ার স্প্লিটার এর সাথে লাগানো থাকে।
ইলেকট্রিক মুড, ইঞ্জিন মুড ছাড়াও এখানে ইঞ্জিন এসিস্ট মুডেও গাড়ি চালানো যায়। এই সিস্টেমে বিভিন্ন রকমের সেন্সর এর ব্যবহার বেশি হয় এবং অটোমেটিকালি যেখানে যেমন শক্তি প্রয়োজন সেই অনুযায়ী শক্তি সরবরাহ করে।
৪। প্লাগ ইন হাইব্রিড: প্লাগ ইন হাইব্রিড (Plug in Hybrid) নামটি বেশ পরিচিত এবং এর ব্যবহার ও দিন দিন বেশ বাড়ছে। উপরে আলোচিত তিনটি টপিকেই দেখা যাচ্ছে ব্যাটারি তখনই চার্জ হবে যখন ইঞ্জিন চলবে। এগুলোতে যখন বাইরে থেকে আলাদা সোর্স দিয়ে ব্যাটারিকে চার্জ করা সম্ভব তখনই সেটা প্লাগ ইন হয়ে যাবে। আর এটাই হল প্লাগ ইন হাইব্রিড।
৫। মাইল্ড হাইব্রিড: এটি একটি ইলেকট্রনিক স্টার্টার এবং রিজেনারেটিং ব্রেকিং সম্পন্ন গাড়ি। এই সিস্টেমে গাড়ির স্টার্টার মোটর এর জায়গায় একটি মডিফাইড মোটর ব্যবহার করা হয়। আর এটি একটি ব্যাটারি এর সাথে সংযুক্ত থাকে। গাড়ি যখন স্টার্ট করা হয় তখন ব্যাটারি এর থেকে পাওয়ার নিয়ে গাড়ি স্টার্ট করা হয়। আর রিজেনারেটিং ব্রেকিং এর কারণে ঐ মোটর টিই জেনারেটর এর মত কাজ করে এবং ব্যাটারি চার্জ করে।
৬। মাইক্রো হাইব্রিড: এটা মূলত হাইব্রিড গাড়ি না। কিন্তু একটি গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি একটি গাড়ি প্রমোশনে এইটিকে হাইব্রিড সেকশনে দিয়েছিল। তবে এখানেও মাইল্ড হাইব্রিড এর মত রিজেনারেটিং মোটর ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ করা হয়।