গরমের দিনে এসি ছাড়া গাড়িতে ভ্রমন প্রায় অসম্ভব। শুধু গরম কালেই না, শীত এর দিনে গাড়ির ভিতরের পরিবেশ কে উষ্ণ রাখতেও এয়ারকন্ডিশন সিষ্টেম (Air Conditioning System) এর গুরুত্ব অপরিসীম। আর গাড়ির এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটির খুটি নাটি সমস্যা আমাদের মাঝে মধ্যেই বেশ ভুগিয়ে থাকে। তাই আজ আমরা গাড়ির এয়ারকন্ডিশনিং সিষ্টেমের কিছু কমন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব।
ঠান্ডা বাতাস না আসা।
প্রায়ই আমরা এই ধরনের সমস্যা নিয়ে ওয়ার্কশপে যাই। আর এই এসি দিয়ে ঠান্ডা বাতাস না আসার কারন হিসেবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় রেফ্রিজারেন্ট (ফ্রিজের গ্যাসকে মূলত রেফ্রিজারেন্ট বলা হয় ,যেমন, CFCs) লিক। কেননা এই রেফ্রিজারেন্ট এর উপরেই গাড়ির এসি সিষ্টেমের বেশিরভাগ কম্পোনেট এর কার্যদক্ষতা নির্ভর করে। লিকেজ গুলো সাধারনত হোজ পাইপ, পাইপের কানেকশন, কম্প্রেসর, কনডেনসার, ইভাপোরেটর এইসব জায়গাতেই হয়ে থাকে।
গাড়ির এসি সিষ্টেমের এই রেফ্রিজারেন্ট (refrigerant) লিক বের করা বেশ কষ্ট সাধ্য একটি কাজ। এজন্য একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা সর্বদা গাড়ির এসি চেক আপ করানো উচিৎ। তাহলে সঠিক ভাবে গাড়ির এই এসি সিষ্টেমের (AC System) সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।
এয়ার ভেন্ট দিয়ে কোন বাতাস না আসা।
এই সমস্যাটি কিন্তু একটু ডিফিকাল্ট। কেননা আগের সমস্যা টি ছিল ঠান্ডা বাতাস না আসা। মানে বাতাস আসছে ঠিকই কিন্তু সেটা গরম। কিন্তু এখানে বাতাসই আসছে না। এই জন্য একজন ভালো টেকনিশিয়ান এর উচিৎ হবে অনেক গুলো চেক আপ করা।
প্রথমত, রিলে (AC Relay Switch) চেক করতে হবে কেননা, রিলে যেহেতু ইলেক্ট্রিকালি কন্ট্রোল হয়ে থাকে তাই রিলে নষ্ট হয়ে গেলে ব্লোয়ারে কানেকশন পাবে না। ফলে ব্লোয়ার মোটর ঘুরবে না এবং বাতাস যাবে না।
দ্বিতীয়ত, ব্লোয়ার মোটর ( Blower Motor) অথবা ব্লোয়ার রেজিষ্টর। এই ব্লোয়ার টি আমাদের বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত ফ্যান এর মতই কাজ করে। এটি এসির ঠান্ডা বাতাস কে ভেন্ট এর মাধ্যমে প্যাসেঞ্জার কম্পার্টমেন্টে প্রবেশ করায়। আর ব্লোয়ার রেজিষ্টর ব্লোয়ার এর বাতাস কে নিয়ন্ত্রন করতে ব্যবহার করা হয়। যেমন, হাই, লো, মিডিয়াম। তাই এই দুইটি বিষয় চেক আপ করা উচিৎ।
তৃতীয়ত, ইনটেক এয়ার ব্লক হতে পারে। গাড়িতে সাধারনত দুইটি জায়গা থেকে বাতাস গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। প্রথমটি হল গাড়ির উইন্ডশীল্ড এর নিচের দিকে যেখানে বাইরে থেকে বাতাস ভিতরে আসে। দ্বিতীয়টি হল যেখানে বাতাসটি রিসার্কুলেট হয়ে কেবিন এর ভিতরে আসে। এই দুই জায়গায় যেকোন ভাবে ব্লক হয়ে গেলে বাতাস আর সামনে আগাতে পারে না।
চতুর্থত, বেল্ট অথবা হোজ পাইপ নষ্ট হয়ে গেলে। যেহেতু গাড়ির এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম টি অনেকগুলো হোজ এবং বেল্ট এর সমন্বয়ে গঠিত। তাই এদের কোন একটি অংশ ভেঙ্গে গেলে বা লিক হয়ে গেলে স্বাভাবিক বাতাস প্রবাহে বাধা আসে।
বাতাস ঠান্ডা কিন্ত কম্পার্টমেন্ট ঠান্ডা হয় না।
এই ধরনের সমস্যা তখনই হয় যখন রেফ্রিজারেন্ট এর পরিমান কমে যায়। কেননা যখন কম পরিমানে রেফ্রিজারেন্ট থাকে তখন প্রেসার কম আসে। তবে অনেক সময় যথেষ্ট পরিমানে রেফ্রিজারেন্ট থাকা সত্বেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
কনডেনসার ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। কনডেনসার মূলত এমন একটি ডিভাইস যেটা ইঞ্জিনের সামনে বসানো থাকে। গাড়ি যখন চলে তখন সামনে থেকে আসা বাতাস কনডেনসার এর তাপ শোষন করে এবং কম্প্রেসর থেকে আসা গরম ভেপোরাইজড (বাষ্পীয়) রেফ্রিজারেন্ট কে ঠান্ডা করে তরলে পরিনত করে। তাই যদি কনডেনসার ড্যামেজ হয়ে যায় তাহলে ভেন্ট এর মধ্য দিয়ে আসা বাতাস ঠান্ডা হবে না।
এছাড়া ক্লাচ সুইচ যদি নষ্ট হয়ে যায় তবুও এই সমস্যা হতে পারে। কেননা আমরা জানি গাড়ির কম্প্ররেসর কে ম্যাগনেটিক ক্লাচ এর মাধ্যমে বেল্ট পুলি দ্বারা ইঞ্জিন এর শ্যাফট এর সাথে সংযোগ দেওয়া হয়। সেই কারনে যদি এই ক্লাচ সুইচ নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কম্প্রেসর সঠিক ভাবে কাজ করবে না। যার ফলে এই সমস্যা টি হবে। তাই একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান এর উচিৎ হবে এই ধরনের সমস্যায় মেজর এর কম্পোনেন্ট গুলো চেক আপ করা।
এসি থেকে উদ্ভট গন্ধ আসা।
অনেক সময়ই এমন হয় যে গাড়িতে এসি অন করা মাত্রই এক ধরনের স্মেল আসে। যা মোটেও সহ্য করার মত অবস্থায় থাকে না। সাধারনত এই গন্ধটি আসে এসি সিষ্টেমে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর কারনে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে গাড়ির এসিতে কিভাবে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। মূলত এসি কম ব্যবহারের কারনে, অনেক দিনের পুরনো হয়ে যাবার কারনে এসি সিষ্টেমে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। আর এই ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস গুলো মূলত ড্যাশবোর্ড এর পিছনে এবং ইভাপোরেটরে জন্মায়। যার কারনে এসি অন করলে এই উদ্ভট গন্ধটি আমরা পেয়ে থাকি।
এসি ফিল্টার পরিবর্তন এর মাধ্যমে অনেকাংশেই এই সমস্যার হয়। কেননা এসি ফিল্টার বাতাসের ধূলিকনা এবং ব্যাকটেরিয়া উৎপাদনে সহায়ক অনেক মাইক্রো অর্গানিজমকে আসতে বাধা প্রদান করে। কিন্তু এতেও শতভাগ সমাধান হবে না। তাই একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান এর কাজ হবে ইভাপোরেটর এর এরিয়াতে এ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সলিউশন (Anti-Bacterial Solution) দিয়ে দেওয়া। যাতে করে সেখানে কোন ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস বংশ বিস্তার করতে না পারে।
এসি অন করলে শব্দ করে।
দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এসি সিষ্টেমের নানা রকমের সমস্যার মধ্যে নয়েজ একটি কমন সমস্যা। তবে এসি চালু করার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি কম্পোনেট ষ্টার্ট হয়ে যায়। যার করনে হালকা শব্দ হতে পারে সাথে অজাচিত শব্দও হতে পারে। তবে সেটা কি ধরনের শব্দ সেটা যানার জন্য একজন দক্ষ এবং বিশ্বস্ত টেকনিশিয়ান এর কাছে যাওয়া উচিৎ। উনি চেক করে বলে দেবেন শব্দটি আসলে কোন স্পেসেফিক কম্পোনেন্ট থেকে আসছে।