গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সবসময়ই এক ধরনের টেনশনে থাকতে হয়। কোন দিন কোন কাগজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেটা সবসময় মনে রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। আর তাই রাস্তায় হঠাৎ ট্রাফিক পুলিশ কাগজ চেয়ে বসলে দেখা যায় তখনই আপনি খেয়াল করলেন মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও দুই দিন আগে। আর যদি আপনি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেন তাহলে তো কাগজ পত্রের সমস্যা লেগেই থাকে। দেখা যাচ্ছে আপনি আছেন তো গাড়ির আসল মালিক নেই। আবার মালিক আছে তো আপনি নেই। আবার এমনও হয়েছে যে, আপনি যার কাছ থেকে গাড়ি কিনেছেন সে মালিক নয় মালিক আরেকজন।
ব্যবহৃত গাড়ি কেনার আগে ডকুমেন্ট এর ক্ষেত্রে আমাদের যে সকল বিষয় গুলো জেনে রাখা দরকার সেই বিষয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।
রিকন্ডিশন গাড়ির ক্ষেত্রে যেই শো-রুম থেকে গাড়ী কেনা হয় তারাই মূলত আপনার গাড়ির ডকুমেন্ট এর কাজ গুলো দেখে থাকে। কিন্তু আপনি যদি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনতে যান সেক্ষেত্রে একজন এক্সপার্ট রাখা জরূরী হয়ে পরে অথবা আপনার নিজেকেই এক্সপার্ট হতে হয়।
সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে, তাহল গাড়ীর আসল মালিক কে? তা চিহ্নিত করা। অনেক সময় আমরা কোন একজন এর মাধ্যম থেকে গাড়ি কিনে থাকি। এক্ষেত্রে আসল মালিক কে তা আমাদের জানার কথা মনেই থাকে না। পরে যখন নাম পরিবর্তন এর সময় আসে তখন দেখা যায় মালিক কে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অবশ্যই আসল মালিক এর সাথে সবার আগে নাম পরিবর্তন এর বিষয়ে কথা বলে নেয়া উচিৎ।
এমনও হতে পারে যে, আপনি যার মাধ্যমে গাড়ী কিনছেন তিনি আপনাকে আসল মালিকের স্বাক্ষর সহ নাম পরিবর্তনের পেপারটি দিয়েছেন। তখন আপনি আসল মালিকের স্মার্ট কার্ড এর স্বাক্ষর এর সাথে সেটি অবশ্যই মিলিয়ে নেবেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও আপনার উচিৎ হবে আসল মালিকের সাথে সরাসরি কথা বলা। কেননা BRTA তে অনেক সময় আসল মালিককে সরাসরি উপস্থিত থাকতে হয়। আর নাম পরিবর্তন এর সময় তো দুই জনকেই উপস্থিত থাকতে হবে। তাই সেই সময়ে যদি আসল মালিক উপস্থিত না থাকে তাহলে বেশ ঝামেলায় পড়ে যেতে হয়।
এবারে গাড়ির গুরুত্বপূর্ন্য কাগজ গুলো নিয়ে কিছু জানা যাক। গাড়ীর নম্বর প্লেট (যেহেতু এখন ডিজিটাল নম্বর প্লেট চলছে তাই সেইটা), রেজিষ্ট্রেশন পেপার, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, ইনস্যুরেন্স পেপার এই ধরনের ডকুমেন্ট গুলো চেক করে নিতে হবে। অনেক সময় গাড়ীর ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়ে থাকে তাই ইঞ্জিনের নম্বর এর সাথে পেপারে উল্লেখিত নম্বর মিলিয়ে নিতে হবে এবং ইঞ্জিন কোথায় থেকে কেনা হয়েছে সেই পেপারও নিয়ে রাখতে হবে। গাড়ীর বডির সাথে চ্যাসিস নম্বর এবং পেপারে উল্লেখিত নম্বর মিলিয়ে নিতে হবে। কালার পরিবর্তন করা হলে সেই সংক্রান্ত ডকুমেন্ট গুলো অবশ্যই নিতে হবে।
যদি কখনো ডকুমেন্ট এর সাথে ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর, এমনকি চাকার সাইজ যদি না মেলে তাহলে সেই গাড়ী গুলো না কেনায় ভালো। গড়ির কোন এক্সিডেন্টাল কেইস আছে কিনা সেটা অবশ্যই চেক করে নিতে হবে। আপনি বুঝতে না পারলে অবশ্যই কোন একজন এক্সপার্টকে দিয়ে তা চেক করিয়ে নেবেন।
গড়ি কেনার সময় আসল মালিক এর কাছ থেকে সম্ভব হলে তার কেনার রিসিট, অকশন পেপার চেয়ে নিতে পারেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন্য বিষয় হল, তিনি কোন গ্রেড এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতেন, ব্রেক ফ্লুইড, লুব্রিকেটিং অয়েল, এসব জেনে নেবেন। সাথে উনি সর্বশেষ কবে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছেন সেটিও জেনে নিতে হবে। কেননা এটি আপনাকে পরবর্তীতে পিরিওডিক মেইন্টেনেন্স এর জন্য সার্ভিস ক্যালেন্ডার বানাতে সহযোগিতা করবে।
এবারে টাকা পয়সার ব্যাপারটি নিয়ে কিছু জানা যাক। যেহেতু আপনি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ী কিনছেন নিশ্চয়ই আপনি কষ্ট করে টাকা গুলো উপার্জন করেছেন। তাই কষ্টের উপার্জিত টাকা টি ব্যাংক এর মাধ্যমে লেনদেন করাই ভালো। অথবা আপনি ব্যাংকে বসে আপনার লেনদেন টি সেরে ফেললেন। অর্থাৎ ডকুমেন্ট ছাড়া একটি টাকাও লেনদেন করবেন না। আপনার সিকিউরিটি পারপাসের জন্য কখনই বিক্রেতার বলা কোন নির্দিষ্ট স্থানে যাবেন না।